স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন: ব্রায়ান ডাইসন
ব্রায়ান ডাইসন ১৯৯২-২০০৩ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় কোকা-কোলা কোম্পানির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও ছিলেন। ডাইসন ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জর্জিয়া টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২তম কমেন্সমেন্টে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।
স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য ভাষণটি অনুবাদ করেছেন ফারজানা রুম্পা।
জীবনটাকে সার্কাসের মতো কল্পনা করো। মনে করো তুমি সেই সার্কাসের প্রধান নায়ক। মঞ্চে তুমি খেলা দেখাবে। তোমার হাতে আছে পাঁচটি বল। বলগুলোকে তুমি ক্রমাগত শূন্যে উড়িয়ে আবার হাত দিয়ে ধরছো।
এই পাঁচটি বলকে তুমি তোমার জীবনের কিছু অংশের সাথে মিলিয়ে ফেলো। যেমন ধরো- কাজ, পরিবার, স্বাস্থ্য, বন্ধু এবং প্রাণশক্তি।
মনে করো তোমার জীবনের এ অংশগুলো শূন্যে ভেসে আছে।
বলগুলোর একটি হচ্ছে ‘কাজ’। এ বলটি রাবারের। হাত থেকে একবার ছুটে গেলে আবার ফিরে আসবে সমান বেগে। কিন্তু অন্য চারটি বল কাচের তৈরি। একবার হাত থেকে ছুটে গেলে হয় ঘষা লেগে ক্ষয়ে যাবে, না হয় আঁচড় লাগবে। কিংবা নিচে পড়লে নিমিষেই ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। মনে রেখো, প্রতিটি বলের পরিণতি কিন্তু সমান হবে না।
এ থেকে শিক্ষা নিয়ে তোমাকে প্রথমেই জানতে হবে কি করে জীবনে সবকিছুর সামঞ্জস্য রেখে সুন্দরভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
প্রশ্ন হতে পারে, সেটি কীভাবে?
কখনো নিজেকে অন্য কারও সাথে তুলনা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, প্রতিটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপের মতো। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে।
অন্যের কথা ভেবে নিজের স্বপ্নকে সাজাবে না। কারণ একমাত্র তুমিই শুধু অনুভব করতে পারবে তোমার চাওয়া পাওয়াগুলোকে।
নিজের স্বপ্নকে বুঝে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করো।
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তাই বলে, স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, তাকে সঙ্গে নিয়ে চলো। স্বপ্ন ছাড়া জীবন অর্থহীন।
শুধু শুধু অতীত বা ভবিষ্যতের অলীক ভাবনায় হা হুতাশ না করে বর্তমান নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো। কারণ যে দিনটা তোমরা এ মুহূর্তে পার করছো, সেটা ভালো গেলেই তোমার অতীত ভালো যাবে, আর মন্দ গেলে ভবিষ্যত যাবে বিগড়ে।
হার না মেনে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের। কারণ যে মুহূর্তে তুমি চেষ্টা করা ছেড়ে দিলে, সে মুহূর্তে তুমি হেরে গেলে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই তুমি নিখুঁত নাও হতে পারো। এটা স্বীকার করতে দ্বিধা কোথায়! অথচ এ ছোট্ট স্বীকারোক্তি তোমার চারপাশের মানুষকে টেনে আনবে তোমার কাছে।
ছোট-বড় ঝুঁকি জীবনে সাহস জোগায়। এ ঝুঁকিগুলোকে ভয় না পেয়ে মুখোমুখি দাঁড়াও। কঠিন সময়গুলো থেকে শিক্ষা নেওয়াই জীবন।
‘সময় কম’ এ অজুহাতে ভালোবাসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। বরং ভালোবাসাকে স্বাধীন পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে দাও। ভালোবাসা নামের শুকপাখিটা তোমার বসে থাকলে একদিন ঠিকই সে তোমার ঘরে আসবে।
জীবনে চলার পথে এমন দ্রুত গতিতে দৌড়ানোর কোনো মানে নেই। যে গতি ভুলিয়ে দেবে তোমার গন্তব্য। সে গতির কি প্রয়োজন? অতএব অহেতুক এ দৌড়ে অংশ না নেওয়াই শ্রেয়।
ভুলে যাবে না, সন্তুষ্টি মানুষের জীবনের আত্মিক চাহিদা।
জীবনের কোনো ধাপেই শিক্ষাগ্রহণে পিছপা হবে না। একমাত্র এ সম্পদই মানুষ সারাজীবন বহন করতে পারে। এ সম্পদের জন্য কোনো রকম ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না।
সময়ের অবহেলা বা শব্দচয়নে উদাসীনতা পরিহার করো। কারণ যে সময়টা চলে যায় তা আর ফিরে আসে না।
যে শব্দ একবার ব্যবহৃত হয়ে যাবে তা ছুটে যাওয়া তীরের মতো; আর ফিরে আসবে না।
ভুলে গেলে চলবে না, জীবন কোনো প্রতিযোগিতা নয়; কিন্তু জীবন মানে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে অবিরাম পরিভ্রমণ। আর প্রতিটা ধাপেই আমাদের বিচরণ করতে হবে। আর এ ভ্রমণ হতে হবে উপভোগ্য।
এভাবেই দেখবে, একদিন তোমার হাতের মুঠোয় ধরা দেবে জীবনের আনন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১১*****যুক্তরাস্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তাঁর পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন যা পরবর্তীতে ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করে। এই চিঠির অনুবাদ ঢাকার একটি নামকরা কোচিং সেন্টারের ওয়েটিং রুমে বড় করে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে-সেখান থেকে সংগ্রহ করে পাঠকদের সাথে শেয়ার করছিঃপুত্রের প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের চিঠির অনুবাদঃমাননীয় মহোদয়,আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে প্রেরণ করলাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন-এটাই আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা।
আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন-সব মানুষই ন্যায়পরায়ন নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়।তাকে এও শিখাবেন-প্রত্যেক বদমায়েশের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিকের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকেন। তাকে শেখাবেন-পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মুল্যবান। এও তাকে শিখাবেন-কিভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কিভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়। হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দিবেন। যদি পারেন নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন আগেভাগেই একথা বুঝতে শেখে-যারা পীড়নকারী তাদেরকে সহজেই কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তাও তাকে শেখাবেন।
আমার পুত্রকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করে পাশ করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশী সম্মানজনক। নিজের উপড় তার যেন সুমহান আস্থা থাকে-এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে।
তাকে শেখাবেন, ভদ্রলোকের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন এ শক্তি পায়-হুজুগে মাতাল জনতার পদাঙ্ক অনুসরন নাকরার। সে যেন সবার কথা শোনে এবং সত্যের পর্দায় ছেঁকে যেন শুধু ভালটাই শুধু গ্রহন করে-এ শিক্ষাও তাকে দেবেন।
সে যেন শেখে দূঃখের মাঝে কীভাবে হাসতে হয়। আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই-সেকথা তাকে বুঝতে শেখাবেন। যারা নির্দয়, নির্মম তাদেরকে সে যেন ঘৃনা করতে শেখে আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে।
আমার পূত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেননা, কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস নাথাকে, থাকে যেন তার সাহসী হবার ধৈর্য। তাকে এ শিক্ষাও দেবেন-নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে আর তখনই তার সুমহান আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি।
ইতি
আপনার বিশ্বস্ত;
আব্রাহাম লিংকন।সূত্রঃ প্রথম আলো, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০২ ইং